নেইমার-মেসিদের জন্য প্রস্তুত সেন্ট পিটার্সবার্গ

শুরু হয়ে গেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের জমজমাট ফুটবল লড়াই। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি— কোনো দলই নিজেদের প্রথম খেলায় জিততে পারেনি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির প্রথম খেলা নিয়ে সব জায়গায় চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এখন সবাই তাকিয়ে আছে পরের খেলাগুলোর দিকে। নিজনি নভগর্দো স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে। তারপরই চলে যাবে সেন্ট পিটার্সবার্গে। আর এই স্টেডিয়ামেই দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল। প্রথম পর্বে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের একটি করে খেলা হবে সেন্ট পিটার্সবার্গে। এ কারণে এই শহরের বাসিন্দাদের অনুভূতিটা একটু অন্যরকম। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার খেলা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপক্ষো করছেন তারা।

যাদের হাতে টিকিট নেই তারা এখনো টিকিট খুঁজছে। পথে পথে দেখা হলে রাশানরা তাদের ভাষায় প্রশ্ন করে ‘উ ভাছ ইয়েসত ভিলেতি’ (তোমার কাছে টিকিট আছে)? দেইতে মিনিয়ে ভাসু কারতু, (তোমার কার্ডটা দিয়ে দাও)। টিকিটের এমন চাহিদা বুঝিয়ে দেয় ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার খেলা নিয়ে তাদের কৌতূহলের বিষয়টি। যারা টিকিট পাবে না তাদের জন্য স্টেডিয়ামের কাছেই আছে ফ্যান ফেস্ট, যেখানে খেলা দেখা যাবে। তারপরও আছে সাগরের পাশে বসে স্টেডিয়ামের উত্তেজনা দেখার চমত্কার পরিবেশ। দুর্দান্ত সব আয়োজন আছে এই সেন্ট পিটার্সবার্গে।

২০০৫ সালে দ্বীপের উপর নির্মিত এই স্টেডিয়াম একসাথে ৬৭ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবে। একদিকে সাগর। নোঙ্গর করা জাহাজের পর জাহাজ। অন্যদিকে চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের উপরে আকাশমুখী ৮টি সাদা রংয়ের প্রতীকী রকেট আছে। প্রথম দেখায় মনে হবে যে কোনো মুহূর্তে আকাশে উড়বে রকেট। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামের মাঠ। স্টেডিয়ামে ঢুকলে দেখা যায় একটি মাঠ; কিন্তু মাঠ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মাঠের নিচে মাঠ আছে। সব মিলিয়ে তিনটি মাঠ। এখানে তিন ধরনের খেলা হয়। ফুটবল খেলা, কার রেসিং এবং অ্যাথলেটিকস। একটি সুইচের ওপর নির্ভর করে মাঠ। সুইচ টিপলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফুটবল মাঠ সরে যাবে। দ্বিতীয় স্তরে আছে কার রেসিং। আছে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক।

বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে ডোপিং সেকশনে কাজ করতে এসে তিনটি মাঠ দেখার সুযোগ হয়েছিল আব্দুল মতিনের। আরো তথ্য দিলেন এই বাংলাদেশি কার্ডিওলজিস্ট। স্টেডিয়ামের দুই গোলপোস্টের নিচে এমন একটি মেশিন স্থাপন করা হয়েছিল যেটা দিয়ে আড়াই ঘণ্টায় হাফ সেন্টিমিটার ঘাস বড় করা হয়। মাঠ স্থাপন করতে সমস্যা হলে তখন এই পথে হেঁটেছিল রাশিয়া। কারণ এক জায়গায় তিনটি মাঠ হওয়ায় সমস্যা হচ্ছিল বলে জানালেন আব্দুল মতিন। তিনি বলেন, ‘মাঠ যখন পুরোপুরি প্রস্তুত তখন ট্রায়াল হিসাবে ফুটবল খেলা দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু সেখানে দেখা যায় খেলা চলাকালীন মাঠে ভাইব্রেশন হয়। কনফেডারেশনের কাপের সময় ফিফা জানিয়ে দিয়েছিল অনুমোদন দেওয়া যাবে না। তখন বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে স্বল্প সময়ে মাঠ উন্নয়ন করতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়।’ একথা বলেই পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ঘাস বড় করার ভিডিওটি দেখান আব্দুল মতিন। ভিডিওতে দেখা যায়, গোলপোস্টের নিচে আলো ফেলে ঘাস দ্রুত বড় করার কাজ চলছে। তিনি জানান, ১১টি মেশিন দিয়ে পুরো মাঠের ন্যাচারাল ঘাস বড় করা হয়েছে। সেন্ট পিটার্সবার্গ মাঠের ঘাস এক রকম, বাইরের ঘাস আরেক রকম। এখন মাঠ প্রস্তুত। ফিফা দেখে গিয়ে সবুজ সংকেত দেয়। কিছু দিন আগেই এই মাঠে কার রেসিং প্রতিযোগিতা হয়েছে। এখন ফুটবল খেলা হবে।’ সেন্ট পিটার্সবার্গে এরই মধ্যে মরক্কো-ইরান, গতকাল রাশিয়া ও মিসরের খেলা হয়ে গেছে। ২২ জুন ব্রাজিল ও কোস্টারিকা, ২৬ জুন আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়া, ৩ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের একটি, ১০ জুলাই ৫৭ এবং ৫৮ নম্বর খেলা জয়ী দুই দল সেমিফাইনালে খেলবে। ১৪ জুলাই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলাটিও অনুষ্ঠিত হবে সেন্ট পিটার্সবার্গে।